১০ টি ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন

মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিতে পারবেন। এগুলো কেবল শুধু চুল পড়া বন্ধ করেনা এর পাশাপাশি চুল নরম ও ঝলমলে করে তোলে। তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ঘরোয়া উপায় চুলের যত্ন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।




চুল পড়া নারী ও পুরুষের সৌন্দর্যের একটি অংশ। তবে বর্তমান সময়ে চুলকে মজবুত রাখা বেশ কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে। বিউটিশানরা বলেছেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়ার হার কমিয়ে তা ঘন ও লম্বা করা সম্ভব।

সূচিপত্রঃ দশটি ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন

চুলের যত্নে ডিমের ব্যবহার

অ্যামাইনো এসিডের অন্যতম উৎস হলো ডিম। ডিম খেয়ে শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি মাথার ত্বকে ডিমের প্যাক লাগাতে পারেন। ডিমে এক ধরনের পেটি অ্যাসিড লেসিথিনের উপস্থিত থাকার কারণে চুল পড়া রোধ করে। ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণ পেপটাইড থাকে যা চুলকে বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে।

ডিমে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড চুল বৃদ্ধি করতে এবং চুলের গোড়া মজবুত ও চুলে ভাঙচুর জনিত সমস্যার সমাধান করে। আপনাকে দিনের প্যাক তৈরির জন্য একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশাতে হবে। এরপর চুলে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে  অ্যালোভেরা

চুল পড়া রোধ করতে অ্যালোভেরা একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার।টাটকা অ্যালোভেরা জেলিতে অ্যামিনো এসিড, ভিটামিন এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ যেমন কপার, জিংক ইত্যাদি উপাদান গুলো পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা জেলিতে প্রোটিওলাইটিক এবং এনজাইম রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে।

আবার মাথার ত্বকে  অ্যালোভেরা জেল মাসাজ করা হলে মৃত কোষ দূর হয় এবং চুলের গোড়ায় পুষ্টি প্রবেশ করতে পারে। শুষ্কতার কারণে মাথার ত্বকের প্রবাহ প্রতিরোধ করতেও এলোভেরা জেল এর জুড়ি মেলা ভার। ১ কাপ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ কাস্টর অয়েল ও দুই টেবিল চামচ মেথির গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর রাতে ঘুমানোর আগে ভালো করে চুলে লাগান। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলগুলো শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে আমলকি

চুল পড়া রোধ করতে জনপ্রিয় আয়ুর্বেদিক  প্রতিকার হচ্ছে আমলকি। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর যা ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ত্বকের কোর্সগুলোর পুনরুত জীবন নিশ্চিত করে।

আমলকির তেল চুলের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং চুল পড়ার তীব্রতা কমায়। আমলকির তেল নিয়মিত চুলে প্রয়োগ করলে চুলের অকাল ধূসরতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমলকি প্যাক তৈরির জন্য কিছুটা নারকেল তেল গরম করুন। এর সঙ্গে আমলকির রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।


নারিকেল দুধের ব্যবহার

চুল পড়া রোধ করতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নারিকেলের দুধ। নারিকেলের দুধে থাকে উচ্চ পরিমাণে লরিক এসিড। যা মাথার ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নারিকেলের দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুলের উপরিভাগ মেরামত করে এবং চুলকে আরো শক্তিশালী এবং মজবুত করতে সাহায্য করবে।

নারকেল দুধে আছে ভিটামিন সি ভিটামিন ই এবং বি কমপ্লেক্স ভিটামিনের মত আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে এই দুধে। আপনি যদি প্রয়োজন মত নারকেলের দুধ হালকা কুসুম গরম করে চুলের গোড়ায় ২০ মিনিট ধরে মেসেজ করুন এবং আরো ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ভালভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে জবা ফুল

চুলের যত্নে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে জবা ফুল। জবা ফুলে আছে প্রয়োজনীয় ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন এবং ক্যালসিয়াম এর মত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্ট উপাদান রয়েছে। তাছাড়াও জবা ফুলে রয়েছে ভিটামিন সি যা চুলের গোড়ায় করাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। এবং চুল মজবুত ও সুন্দর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনি প্রয়োজন মত জবা ফুল এবং জবা ফুলের পাতা ভালোভাবে বেটে নিন এরপর নারিকেল তেলের সাথে মিশে চুলে ভালোভাবে লাগান। চুলে লাগানোর পর কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার চুল অনেক সুন্দর এবং সিল্কি হয়েছে।

চুলের যত্ন মেথি

চুল পড়া রোধ করতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হচ্ছে মেথি। মেথিতে রয়েছে ভিটামিন এ ,ভিটামিন বি যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মেথির বিজে অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় চুলকে সুন্দর এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।

মেথিতে থাকা লেসিথিন নামক একটি বিশেষ উপাদান চুলের গঠন উন্নত করে এবং চুল বশ্রিন ও ঝলমলে করতে সাহায্য করে। আপনি সর্বপ্রথম মেথিকে পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মেথি বেটে চুলে লাগান। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে দিন তারপর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

পেঁয়াজের রস ব্যবহার 

চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পিয়াজের রস। আপনি যদি নিয়মিত পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন তাহলে চুল পড়া কমে যাবে। পেঁয়াজের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফেনলিক যৌগ যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে

প্রথমে আপনি কয়েকটি পেঁয়াজ বেটে পেস্ট করে পেঁয়াজের রস বের করে নিবেন। এরপর চুলের গোড়ায় লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। পেঁয়াজের রস শুধু চুল পড়া রোধ করে না মাথার খুকশীয় দূর করে।

চুলের যত্নে পাকা কলা

আপনি কি চুল নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তাহলে আর চিন্তা নেই আপনার চুল সুন্দর করতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পাকা কলা। আপনার প্রথমে একটি পাকা কলা ভালোভাবে হাত দিয়ে চটকিয়ে নিন। এরপর চটকানো কলার ভেতরে দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখুন। এরপর সেপর দিয়ে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার চুল সুন্দর ও মজবুত হয়েছে।



চুলের যত্নে নারিকেল তেল

চুলের রুক্ষতা দূর করতে নারিকেল তেলের জুড়ি মেলা ভার। আপনি প্রথমে নারকেল তেলের সঙ্গে কয়েক ফোটা ফাস্ট অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে চুলের ত্বকে লাগান। আপনি সপ্তাহে কয়েকবার এটি ব্যবহার করতে পারেন। রাতে নারকেল এর তেল লাগে সকালে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে অ্যাডোভোকা

চুলের যত্নে অ্যাভোকাডো উপকার বলে শেষ করা যাবে না। অ্যাভোকাডোই রয়েছে ভিটামিন বি এবং ভিটামিন এর মত প্রয়োজনীয় সকল উপাদান যা চুলকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আপনি প্রথমেই অ্যাভোকাডোর বীজ ভালোভাবে বেঁটে নিন । এক কাপ টক দই মিশিয়ে একটি মিশ্র তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

লেখক এর শেষ মন্তব্য

সুন্দর চুল কে না পেতে চাই । ছেলে হোক কিনবা মেয়ে সবাই চায় সুন্দর চুল। আপনি ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজে চুলকে সুন্দর ও মজবুত করতে পারবেন আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না। এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url