চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আপনিও কি চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ুন। আজকের এই পোস্টে থাকছে চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারে সঠিক নিয়ম, কারি পাতার তেল তৈরির ঘরোয়া উপায়, কারি পাতায় থাকা পুষ্টিগুণ ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন,




কারি পাতা ভিটামিন এর একটি অন্যতম উৎস। এবং কারি পাতা চুলের যত্নে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। নিচের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কিভাবে চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের আলোচনার বিষয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের নিয়ম

কারি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চুল পড়া কমাতে এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন বি মেলে যা আপনার অকালের চুল পাকা রোধ করবে। তাহলে চলুন এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক স্বাস্থ্যজ্জল , ঘন ও ঝড়মলে চুলের জন্য কিভাবে কারি পাতা ব্যবহার করবেন।

চুলের যত্নে আমলকি, মেথি ও কারি পাতার ব্যবহারঃ আপনি প্রথমে আধা কাপ মেথি পাতা, কারি পাতা ও আমলকি একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে নিবেন। এরপর চুলে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখুন। এরপর চুলগুলো শ্যাম্পু দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং আপনি চাইলে শ্যামপুর সঙ্গে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের যত্নে নারিকেল তেল ও কারি পাতার ব্যবহারঃ একটি চুলায় প্যান গরম করে নারিকেল তেল দিন। এরপর প্যানে  একমুঠো কারি পাতা দিয়ে হালকা আচে কিছুক্ষণ গরম করুন। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেকে  নিন। এই তেল চুলে প্রতি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করবেন দেখবেন আপনার চুল সুন্দর এবং উজ্জ্বল হবে।

চুলের যত্নে পেঁয়াজ ও কারি পাতার ব্যবহারঃ চুল পড়া রোধ করতে পেঁয়াজ ও কারি পাতার মিশ্রণটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পেঁয়াজ ও কারি পাতা প্রথমে একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর তা থেকে রসটুকু বের করে নিতে হবে। এরপর আলতো হাতে চুলের গোড়ায় ব্লেন্ড করা পেঁয়াজ ও কারি পাতার রস লাগান। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে কারি পাতা ও টক দইয়ের ব্যবহারঃ কারি পাতা ব্লেন্ড করে তা থেকে রস বের করে দই এর  সঙ্গে মিশাতে হবে এবং চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগাতে হবে। এরপর ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে।

চুলের যত্নে কারি পাতা ও জবা ফুলের ব্যবহারঃ প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে কিছু জবাব ফুল এবং কারি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে ভালো করে ছেঁকে নিতে হবে এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলে লাগাতে হবে। চুলে লাগানোর 30 থেকে 40 মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

পাকা চুল থেকে রেহাই পেতে কারি পাতার ব্যবহার

আপনার বয়স ৩০ পার হয়নি কিন্তু আপনার চুলে পাক ধরেছে। আপনার বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী সবাই আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। তাই আপনি চুলপাকা থেকে রেহাই পেতে কারি পাতা ব্যবহার করতে পারেন কারণ কারি পাতা পুরুষ এবং নারীদের চুল পাকা রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনার চুল যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, তাহলে আপনি কারি পাতা তেল মাখুন। কারি পাতার তেল চুলে মাখলে আপনার চুলে স্প্লিট এন্ড এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। কারি পাতার তেলে থাকা ভিটামিন এ আপনার চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং এতে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার চুলের ক্ষয় প্রতিরোধ করবে এবং চুল পাকা রোধ করবে।

আপনি যদি নিয়মিত কারি পাতার তেল ব্যবহার করেন তাহলে চুল পাকার সমস্যা এড়াতে পারবেন। এছাড়াও রোজ কারি পাতার তেল ব্যবহার করলে চুলে কালার করার দরকার পড়বে না এবং চুল অকাল পক্কতাকে প্রতিরোধ করবে কারি পাতার তেল।

চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলার মানুষ চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করে আসছে। কারি পাতা ভিটামিনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দি ধরে মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতে এবং চুল বৃদ্ধি করতে কারি পাতা ব্যবহার করছেন। তাহলে চলুন এই পোস্টের মাধ্যমে চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কারি পাতা চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেঃ কারি পাতায় রয়েছে অনেক পরিমাণে ভিটামিন বি , ভিটামিন সি প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার মাথার ত্বকে লাগালে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এর ফলে আপনার মাথায় নতুন চুল গজাবে।

কারি পাতা চুলের আগা ফাটা কমায়ঃ আপনারা অনেক সময় লক্ষ্য করে দেখবেন আপনাদের চুল অনেক ঘন থাকার পরও আগা-ফ্যাটার সমস্যা দেখা দেয় এতে চুল দেখতে অনেক খারাপ লাগে। এক্ষেত্রে আপনি চুলের আগায় শুধু কারি পাতা বেটে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। এভাবে কিছুদিন লাগানোর পর দেখবেন আপনার চুলের আগা ফাটা সমস্যা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে।

কারি পাতা খুশকি করতে সাহায্য করেঃ কারি পাতায় প্রচুর পরিমাণে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা আপনার মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে। তবে আপনি কারি পাতা এবং এর সমপরিমাণ দই নিয়ে পেস্ট করে ব্যবহার করতে পারেন এতে খুশকি অতি তাড়াতাড়ি দূর হবে।

কারি পাতা চুল ঝলমলে করতে সাহায্য করেঃ আপনি শুধু কারি পাতা বেটে চুলে লাগালেও পাবেন খুব সুন্দর এবং ঝলমলে চুল। কারি পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকাই এই পাতা ব্যবহার করে আপনি আপনার চুলকে করে তুলতে পারবেন দীপ্তিময় এবং প্রাণবন্ত।

কারি পাতা চুল পড়া রোধ করেঃ কারি পাতা ভিটামিন প্রোটিন এবং আরও অনেক পুষ্টিগুণে ভরা। তাই কারি পাতা চুলের গোড়া শক্ত এবং মজবুত ও চুল পড়া রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আপনি চাইলে ১৫ থেকে ২০টি কারি পাতা বেটে তার সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিস করে চুলে লাগাতে পারেন এতে আপনার চুল পড়া কমে যাবে।


ঘন কালো চুল পেতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন কারি পাতা

ঘন কালো চুল পেতে আপনার খাদ্য তালিকায় কারি পাতা রাখুন। কারণ আপনার শরীর যে খাদ্য গ্রহণ করবে আপনার চুলও সে খাদ্যটি গ্রহণ করবেন। তাই চুল ঝরে পড়া রোধ করতে এবং চুল মজবুত ও সুন্দর করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা কারি পাতা যোগ করুন। তাই আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিভাবে কারি পাতা খাবেন চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।

কারি পাতা রোদে শুকিয়ে পাউডার তৈরি করে সেটি তরকারি কিংবা ভাতের সাথে আপনি খুব সহজেই হতে পারবেই।

এছাড়া আপনি কারি পাতা এবং পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে একসাথে মিশিয়ে বাটার মিল্ক বা দুধ দিয়ে খেতে পারেন।

আবার আপনি ইচ্ছা করলে কারি পাতা ভেজে নিয়ে বা সিদ্ধ করি সবজি হিসেবে খেতে পারবে। এভাবে খেলে আপনার প্রতিদিনের খাবারের একঘেয়েমি দূর হবে। কারণ কারি পাতা রয়েছে একটি সুন্দর নিজস্ব গন্ধ যা আপনার ক্ষুধা  বাড়াবে এবং খাওয়ার পর আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে।

চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কারি পাতা একটা আয়ুর্বেদিক ভেষজ ওষুধ কারি পাতা ব্যবহারে তেমন কোন অপকারিতা নেই তবুও প্রত্যেকটি জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা মেনে চলাই ভালো। তাই কারি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমরা নিম্নলিখিত সতর্কগুলো মেনে চলার চেষ্টা করব।

কারি পাতা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবুও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন এলার্জির সমস্যা আমরা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় কারি পাতা মাথার ত্বকে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের মাথায় এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কারি পাতা মাথায় লাগানোর পূর্বে আপনার তোকে ত্বকে অল্প পরিমাণ লাগিয়ে দেখুন আপনার শরীরে এ পাতা ব্যবহারের ফলে কোন এলার্জি জাতীয় সমস্যা হচ্ছে কিনা তারপরে ব্যবহার করুন।

আবার অনেকের কারি পাতা তেল ব্যবহারের ফলে শরীরে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। যাদের এই সমস্যা হলে তারা অবশ্যই তারই পাতা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

গর্ভবতী মায়েরা অবশ্যই অতিরিক্ত কারি পাতা খাওয়া এবং মাথার ত্বকে লাগানো থেকে বিরত থাকবেন কারণ এটা আপনার সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। তাই আমার পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভ অবস্থায় কারি পাতা না খাওয়াই উত্তম।

আপনারা কারি পাতার বীজ কখনোই ভক্ষণ করবেন না। কারণ কারি পাতার বীজ অনেক বিষাক্ত হয়ে থাকে।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা অবশ্যই মনে রাখবেন যে, এক এক মানুষের চুলের প্রকৃতি একেক ধরনের হয়ে থাকে। আপনার শরীরের জন্য কতটুকু কারি পাতা ব্যবহার করা উত্তম এবং আপনি কিভাবে চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহার করবেন সেই সিদ্ধান্তটি একান্তই আপনার। তাই নিজের শরীরের কথা চিন্তা করে ভেবেচিন্তে কারি পাতা ব্যবহার করবেন।

কারি পাতার তেল তৈরির ঘরোয়া উপায় 

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার বা চুলের যত্নে আমরা কিভাবে কারি পাতা ব্যবহার করব এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। সাধারণত সবাই চুলের যত্নে কারি পাতার তেল ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু কারি পাতা তেল কিভাবে তৈরি করতে হয় এটা অনেকেরই অজানা তাই আজকের এই পোস্টে জানব কারি পাতার তেল তৈরির ঘরোয়া উপায় বা ঘরে বসেই অল্প সময়ে কিভাবে কারি পাতার তেল তৈরি করা যায়।

আপনি প্রথমে কিছু কারি পাতা নিয়ে খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন এরপর রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিবেন। এবার চুলাই একটি প্যান বসিয়ে দিন এবং প্যানে এক কাপ নারকেল তেল দিয়ে হালকা তাপে গরম করুন। এরপরে আধা চা চামচ কালোজিরের বীজ এবং মেথির বীজ যোগ করবেন। কিছুক্ষণ নারকেল তেল দিয়ে নাড়াচাড়া করার পরে তাতে কারি পাতা দিবেন। এভাবেই খুব সহজে তৈরি হয়ে যাবে আপনার কারি পাতার তেল।

কারি পাতা খাওয়ার উপকারিতা 

কারি পাতার গাছ আমাদের দেশে জঙ্গলে জন্মালেও বাহিরের দেশে কারি পাতার গাছ চাষ করা হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কারি পাতায় থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মানুষের শরীরের ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পোস্টের মাধ্যমে কারি পাতা খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

কারি পাতা হজম ক্ষমতার উন্নতি করেঃ আদিকাল থেকে গ্রাম বাংলার মানুষ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে কারি পাতা ব্যবহার করে আসছেন। কারি পাতায় থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মানুষের শরীরের হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি করে। এছাড়াও কারি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে বদহজম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কারি পাতায় পাওয়া যায় ডাইক্লোরোমেথেন , আসিটেট এর মত বিশেষ উপাদান গুলো যা মানুষের শরীরের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারি পাতা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কারি পাতা কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে।

কারি পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ কারি পাতা রয়েছে চিনির মাত্রা কমানোর বৈশিষ্ট্য। কারি পাতা প্রতিদিন খেলে ইনসুলিনের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে আপনার শরীরের রক্তের সরকারের মাত্রা স্বাভাবিক লেভেলের উপরে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। শুধু তাই নয় কারি পাতা আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অ্যানিমিয়া নিরাময়ের সাহায্য করেঃ ফলিক ও আয়রনের ভরপুর এই প্রাকৃতিক উপাদানটি হল কারি পাতা। যা আপনার শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়িয়ে দেবেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন সকালে একটা খেজুরের সঙ্গে দুইটি কারি পাতা খেলে অনেক উপকৃত হবেন।

ক্ষত নিরাময়ের সাহায্য করেঃ প্রাচীনকাল থেকেই গ্রাম বাংলার মানুষ কারি পাতা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তাই কোন কাটাস্থানে কারি পাতা বেটে লাগালে ক্ষতস্থান অতি দ্রুত সেরে যায়। এছাড়াও কারি পাতার পেস্ট লাল লাল ফুসকুড়ি, ফোড়া এবং হালকা পরা জায়গাও সারাতে সাহায্য করে।



কারি পাতা খাওয়ার অপকারিতা

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কারি পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা আয়ুর্বেদিক ওষুধ এটা আমরা অনেক আগেই জেনে গেছি। কিন্তু কারি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অজানা তাই কারি পাতা খাওয়ার অপকারিতা বা অতিরিক্ত কারিপাতা খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি হতে পারে তা আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আলোচনা করা হলোঃ

এসিডিটির সমস্যাঃ একটি মানুষ পরিমাণমতো কারি পাতা খেলে তার পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাই। কিন্তু এই পাতা অতিরিক্ত খেলে অ্যাসিটিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

পেট ব্যথা হতে পারেঃ আপনি অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে আপনার পেট ব্যথা হতে পারে। কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ফাইবার যার ফলে অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে পেট ব্যথার সমস্যা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যাঃ আপনার শরীরে যদি রক্ত জমাট বাধার সমস্যা থাকে তাহলে এই পাতা আপনার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। কারি পাতায় থাকা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান আপনার শরীরের এই সমস্যার জন্য দায়ী।

গর্ভাবস্থায় কারি পাতা খাওয়ার সমস্যাঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য কারি পাতা স্বাস্থ্যের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ খাবার। কারি পাতার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতের ও অফার প্রসবের ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

ওপরের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে কারি পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে এটি পরিমাণের অধিক খাওয়া যাবেনা তাহলে আমাদের শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য পরিমাণ মতো এবং সঠিক নিয়মে কারি পাতা খেতে হবে।

কারি পাতায় থাকা পুষ্টিগুণ গুলো জানুন

কারি পাতায় অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে এর মধ্যে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই অন্যতম। কারি পাতা প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর। যা স্বাস্থ্যের উপকারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সাহায্য করে। কারি পাতা আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস , আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ গুলির একটি অন্যতম উৎস হচ্ছে কারি পাতা। যা হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্ত সঞ্চালন এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ রোগের সমাধান করে থাকে।

এছাড়াও কারি পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরকে ফ্রি রেডিক্যাল এর ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন। কারি পাতায় এলকালয়েড, গ্লাইকোসাইড এবং ফেনোলিক যৌগের উপস্থিতি এর ঔষধি গুনকে অনেক বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এই যৌগগুলি তাদের আন্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এবং আন্টি ডায়াবেটিক ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য গুলির জন্য পরিচিত। নিম্নে কারি পাতার কিছু পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা কারি পাতায় রয়েছে যে পুষ্টি গুণগুলোঃ

  1. প্রোটিন - ৬ গ্রাম
  2. ভিটামিন সি - চার মিলিগ্রাম।
  3. শর্করা - ১৮.৬ গ্রাম
  4. ক্যালসিয়াম - ৮৩০ মিলিগ্রাম
  5. বিটা ক্যারোটিন - ৭৫০ মিলিগ্রাম
  6. আয়রন - এক মিলিগ্রাম
  7. শক্তি - ৭৬৬ গ্রাম
  8. ভিটামিন -বি৬ - ৬. ০৪ মিলিগ্রাম

কারি পাতা বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায়

কারি পাতার উপকারিতা অপকারিতা এবং কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকেই জেনে গেছেন। কিন্তু অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায় আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করব বাংলাদেশের কোথায় কারি পাতা পাওয়া যায়।

কারি পাতা সাধারণত ঢাকা যেকোনো বড় সবজি বাজারে পাওয়া যাবে। তবে ঢাকার রন্ধন প্রণালীতে কারি পাতার ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। এজন্য সকল বাজারে কারি পাতা নাও পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও আপনি চাইলে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কারি পাতা সংগ্রহ করতে পারবেন।

কারি পাতার আঞ্চলিক নাম কি

কারি পাতা একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধি গুন সম্পন্ন উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ সম্পর্কে অনেক মানুষের জানার আগ্রহ রয়েছে। এই উদ্ভিদ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। চলুন আজকে কারি পাতার আঞ্চলিক নাম সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

বারসুংগা বা কারি পাতা (বৈজ্ঞানিক নামঃ Murraya Keonigii অথবা Bergera Koenigii) Rutaceae গোত্রের একটি ক্রান্তীয় বা উপক্রান্তীয় উদ্ভিদ (rue,citrus এবংsatinwood) যা ভারত এবং শ্রীলংকা এর আঞ্চলিক উদ্ভিদ। কারি পাতা ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ অনেক ধরনের রান্নায় ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাংলায় কারি পাতার স্থানীয় নাম ও আছে যেমনঃ নিমভূত গাছ বার সংজ্ঞা ইত্যাদি। কারি পাতা থেকে গোলমরিচ, লবঙ্গ , মরিচ আদাযুক্ত এক প্রকার সুগন্ধ বের হয় তাই বাংলাদেশের কারি পাতা মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


কারি পাতা বা কারি পাতার গাছ চেনার সহজ উপায়

মানব স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারী একটি পাতা হচ্ছে কারি পাতা। কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। কারি পাতা খাবারের সাথে ব্যবহার করা হয় এটি খাবারের স্বাদ অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এটি রান্নায় ব্যবহৃত অপরিহার্য একটি উপাদান হিসেবে পরিচিত। ভারতে বা শ্রীলঙ্কায় এ পাতা অনেক পরিচিত হলেও বাংলাদেশের অনেকেই এ পাতা সম্পর্কে জানে না। তাহলে চলুন নিচে আলোচনা থেকে কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে জানা যাক।

কারি পাতা রান্নার রুচি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে এ পাতার অনেক স্বাস্থ্য উপকারী গুণ থাকার কারণে অনেকেই এ পাতা খেতে আগ্রহী। বাংলাদেশের অনেকে আছেন যারা কারি পাতা চেনেন না। নিম পাতাকে কারি পাতা মনে করে কিন্তু নিম পাতা ও কারি পাতা এক নয়। তবে কারি পাতা দেখতে অনেকটাই নিম পাতার মত হয়। কারি পাতার মিষ্টি স্বাদ ও ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে কিন্তু নিম পাতা সাধে তেতো হয়।

কারি পাতা গাছের উচ্চতা মাঝারি প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিটার উঁচু হয়। কারি পাতা দেখতে অনেকটা নিম পাতার মতো কিন্তু নিম পাতা থেকে কিছুটা ছোট এবং ঘন হয়ে থাকে। এ গাছের ফুল সাদা এবং ফল নিম ফলের মতোই হয়। তবে নিম ফল পরিপক্ক হলে এর রং সবুজ হয়ে যায় অন্যদিকে কারি ফল পরিপক্ক হলে সবুজ থেকে লাল অথবা কালো হতে দেখা যাই।

কারি পাতার দাম কত তা জেনে নিন

কার পাতা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী গ্রামবাংলায় এটি যেখানে সেখানে পাওয়া যায় কিন্তু শহরে তেমন দেখা মেলে না। তাই কারি পাতা সংগ্রহ করে শুকিয়ে গুড়ো করা হয় তারপরে এটি বিক্রি করা হয় তাহলে চলুন কারি পাতার দাম সম্পর্কে বা কারি পাতা গাছের দাম কত তা জেনে নেওয়া যাক।

১ কেজি কারি পাতা গুড়া দাম ৩২০০ টাকা। এবং ৫০ গ্রাম কারি পাতার দাম ১৬৫০ টাকা। তবে ভালো মানের কারি পাতা গুঁড়ো নিতে চাইলে এর দাম কিছুটা বেশিও হতে পারে। আপনি যদি কারি পাতার গাছ কিনতে চান তাহলে বড় সাইজের পুরাতন গাছের দাম ২৫০ টাকা।

লেখকের শেষ মন্তব্য

 চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদেরকে জানালাম যে, কারি পাতা কতটা অসাধারণ চুলের যত্নের একটি প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে। আপনার নিশ্চয়ই জানতেন না যে কারি পাতা চুলের জন্য কতটা উপকারী। আমি একটি ব্যবহারের মাধ্যমে জেনেছি এটা কত উপকারী। এটি ব্যবহার করার ফলে চুল পড়া, খুশকি দূর করা এবং শুষ্কতার মত সমস্যাগুলোর জন্য কারি পাতা তেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কারি পাতার তেল শুধু আপনার চুলকে মজবুতই করে না আপনার চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাই আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে তুলে যত্ন নিতে চান তাহলে কারি পাতা হতে পারে একটি অন্যতম মাধ্যম।

হে প্রাণ প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা আমি আশা করি আপনারা যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন এ পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চয় জানতে পেরেছেন। তাই এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে মাফ করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url